।। বাক্‌ ১২২ ।। সমর রায়চৌধুরী ।।







সমর রায়চৌধুরী–র দুটি কবিতা

বিহু নাচের মাংস

মাঝে মাঝে বিয়ে করতে হয়, না হলে ভালো থকি না
বিবাহহীন কয়েক সপ্তাহ পার হলেই মনে হয়—
অনেকদিন হল, এবার একটা বিয়ে করা দরকার
তারপর কখনও
পড়তে পড়তে জীবনানন্দের ‘জলপাইহাটি’ উপন্যাসটিকে আমি বিয়ে করে নিই
শুনতে শুনতে মনীষা মুরলীর ‘ও যে মানে না মানা’ গানটিকে বিবাহ করি
ফিল্ম দেখতে দেখতে এভাবেই একসময় ‘চারুলতা’ –
কখনও বা ‘মেঘে ঢাকা তারা’ কেও আমি পরিণয়ে আবদ্ধ করি

আসাম যাওয়ার কথা ওঠে –
ভাবি, যদি যাই , বিহু নাচ অবশ্যই দেখবো, কারণ
টিভিতে দেখেই বিহু নাচের প্রেমে আমি বিভোর
কবে থেকে তার পাণি প্রাথী
যদিও শেষমেশ আর হয়ে ওঠে না
তবে জানি, সুযোগ একদিন পাবোই, আর সেদিন
আমার নতুন বউ বিহু নাচের মাংসের সাথে
তোমাদের অবশ্যই আলাপ করিয়ে দেবো




শম্ভু মিত্র

সকালে হঠাৎই ‘ইয়োকান্ত’ ‘ইয়োকান্ত’ বলে হাঁক পাড়ি
স্ত্রীর নাম মিলু, সাড়া দেবার কথাই নয়, কিন্তু দেয় –
কি ব্যাপার? রুটি বানাচ্ছি, এত হাঁকডাক কিসের!
‘চশমাটা পাচ্ছি না’
এনে দেয়
একদিন বিকেলে একটু বাদে বাদেই ‘ইসমেনে’ ‘আন্তিগোনে’ বলে ডেকে উঠি,
অথচ মেয়েদুটির নাম শিমূল আর করবী
ফলে সাড়া নেই, সাড়া পাবার কথাও নয়
মনে পড়ে, একজন কোচিং, অন্যটি টিউশনে

বাজার, পথে বের হই—মানুষ, মানুষি
কাউকে মনে হয়’ দুখ জাগানিয়া’ কাউকে ‘ঘুম পাড়ানিয়া’
মনে মনে কাউকে বলি – ‘তাইতো আমায় জাগিয়ে রাখো’
বাতাস আমাকে বলে ‘পাগলা’
চাঁদ ‘নন্দিন’ ‘নন্দিন’ করে বুকের ভেতর

মিলু একদিন বাইরে থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে উত্তেজিত
বললো, শুনেছো, এত সাহস, খবরের কাগজঅলা, সেও কিনা
একজনকে আমাদের বাড়ি দেখিয়ে বলে – ওইতো, বিশু পাগলার বাড়ি...
রাগ হয় আবার মনে মনে সন্তোষেও
ওই কাগজঅলার মতো এত শম্ভু মিত্র আমি জীবনে দেখিনি
মিলুকে আদর করে বলি :  তোমার মতো তৃপ্তি মিত্র আর কে আছে !




No comments:

Post a Comment