।। বাক্‌ ১২২ ।। মাজহার সরকার ।।





চারটি কবিতা : মাজহার সরকার


গুড ফুড

প্রেমিকা বলে পাঁচশ টাকার লিপস্টিক
আমি নিজেই খেয়ে ফেলি তিনশ টাকা
এক হাজার টাকার বডি লোশনের
অর্ধেক যায় আমার পেটে
অর্ধেক দেখে লোকে।

বলে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরো
পেছন থেকে ধরে প্রেম করা আরাম
আগে চেয়ারে বসলে নিজেকে চেয়ারম্যান মনে হতো
বিছানায় শুলে পারফর্মার
এখন আমার চেয়ার পড়ে যায়
ছাতা হারিয়ে যায়
মাথা ভিজে যায়।
ঠোঁট দেখলেই মনে হয় হাঙর
আমি আটকে যাবো আটকে যাবো
মাগুরের মতো তড়পাতে থাকবো পেটের বেহালায়।

তিনটা বোতাম খুলতে এতো অলসতা?



জ্ঞানের প্রয়োজনে

একটা মুসলমান মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেম হয়েছিলো
একদিন তার হাতটা ধরতে চাইলে সে দূরে সরে গেলো
বললো, আমার স্রষ্টা অনেক পবিত্র- সুবহান আল্লাহ
বললাম, দরিদ্র রবীন্দ্রনাথ তোমাকে ভালোবাসে
আজ একা পেয়ে তোমাকে খুশি করতে পারে
স্তন নিয়ে একা সৌন্দর্য গোপন রাখতে পারো না তুমি
আজ খোলো, তোমার স্রষ্টাও আবৃত নয়
ওষ্ঠ দাও, একটা চুমু তার দরবারে কবুল হবার অপেক্ষায় আছে
অন্তরে স্থান দাও তোমাকে সোনা করে তুলি
আমাকে নগ্ন দেখে চক্ষু বন্ধ করে ফেলো না
স্রষ্টার রিজিক অতি উত্তম।
মেয়েটি বলে, আমার স্রষ্টা অনেক পবিত্র- সুবহান আল্লাহ
মাখলুকাত থেকে নিজেক ফানা করে স্বীয় আমলে ফিরেছি
অনুমোদন করো, যদি মুমেন হয়ে থাকো তার নাম নাও
আর আমাকে গোপন কোথাও নিয়ে চলো
আমি পৌঁছে যাবো তোমার অঙ্গে
গুনাহ এড়িয়ে বন্ধু হবো, ঈমানে নৈকট্য দেবো
বললাম, স্রষ্টার স্মরণ থেকে তোমাকে শূন্য করার ইচ্ছে আমার নেই
একবার কাঁধে উঠো মাঠ পেরিয়ে যাই
আজ এই স্তন নিয়ে বিদায় নিও না
হাত দুটো দাও লিপ্ত হই, প্রথম থেকে শুরু করি
জ্ঞানের প্রয়োজনে একে অপরের কাছে আসি
যদি আমাকে দেখে তোমার চক্ষু শীতল হয়।
মেয়েটি বলে, প্রকাশ পাবো দুই জাহানে
কায়েম হবে প্রেম
ছিদ্র পাত্রের মতো তিলে তিলে খালি হবো
আসো দরিদ্র



মহাখালী

আজও আমি লাল বাস, দুপুর  যুথীকে ভালোবাসি
হাত ফসকে উড়ে যায় পাখি পাখি
পাখি উড়ে যায়
এই ভয়ে চোখ বুজে রাখি।
আজও আমি যাই মহাখালী, বিদ্যুৎ বিকীর্ণ হাতে ভালোবাসা শুইয়ে রাখি
শুধু টুকরো রুমাল নাড়ি, ক্ষতের চারপাশে উড়ে রক্তলিপ্সু মাছি।
আজও টুপটুপ টুপটুপ মাংস ঝরে যায়
বাগানগুলো বধ্যভূমি হয়ে উঠে, পুড়ে যায়
অমল খামার
বাড়ি
আজও পৃথিবী শেকড় বাকড় অবিরল আগাছা
কেবল
চড়া বাল্ব মাছের বাজারে ভাঙা বরফ
বাঁশের ঝুড়ি
মহাখালী মহাখালী, চারদিকে ইতস্তত শসার খোসা
মাথা নিচু করে হাঁটি, মাথা নিচু করে হাঁটি।



গ্রামে

প্রত্যেক গ্রামে কিছু শিশু আছে
চাঁদহীন বাঁশবনের পাশ দিয়ে যেতে
প্রথম রাতে তাদের কাঁদতে শোনা যাবে
যতক্ষণ না কিশোরীরা তাদের কোলে নিয়ে উঠোনে
দরজায় দাঁড়িয়ে চুম্বন করে, দোল খাওয়ায়
প্রত্যেক গ্রামের নিজস্ব গন্ধ আছে
পাতা পচা, নোয়ানো মুরতা, ছেঁচা খাসের ঘ্রাণ
প্রেম আর প্রাচীন কেউ
টর্চ মেরে ফিরে আসে পরিচিত মাতৃনদীতে
গরু ডাকে কুকুর ডাকে
ভ্রান্ত দেহ নিয়ে আসে জোঁকের শরীরে
ভিজে
মুখের বসন্ত নীল
তিল দেখে মুছে দেবে ভেবে
গ্রাম তার শেষরাতে আম রঙের পোশাক নেড়েছিল
প্রত্যেক গ্রামে অভিভূত শ্বেতপ্রভা
জ্বলে যায় জড়মৃত্তিকার খুলে যাওয়া গিঁট
গহ্বরে
সব জলের ইচ্ছের তলে উঁচু হয়ে দেখি
একটা হরিণ পাহাড় থেকে ঝরনার হেঁটে যাওয়া
দেখেছে
প্রত্যেক গ্রামে এখন শিশুরা ঘুমিয়ে গেছে
ধীরে গোলাপ ফোটার শব্দে
অতি যত্নে কিশোরীর বাজুতে মেঘের নিকটে
আমাদের প্রতিবেশী।



No comments:

Post a Comment