।। বাক্‌ ১২২ ।। অমিত সরকার ।।




বাংলা দিদিমণির জন্য

জন্ম আর পরজন্মের মধ্যে যে অপর্যাপ্ত আলো
তাদের মধ্যে দিয়ে উড়ে যাচ্ছে পোষা শামখোল
নক্ষত্রদেরচোখভরেউঠছেজলে
ইদানীং আমরা অনেকটা সহনীয়, পারস্পরিক    
দুজনেই অপেক্ষা করছি
আগুন আর পেট্রোলের একটানম্র বন্ধুতার   
লঙ শটে একটা ভিজেসূর্যাস্তেরবোতামখুলতেখুলতে
মাথাভর্তি পাকাচুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাংলা দিদিমনি
সাদা জামদানী, ঈষৎ স্বাস্থ্যবতী, মুখে পান   
দামাল রেললাইন ছুটতে ছুটতে হঠাৎ জুম করে খোয়াই   
যে সব টোটোগুলো দাঁড়িয়ে আছেরবীন্দ্রগানের ওপারে
তাদের একচিলতে অ্যালঝাইমার
বয়ে নিয়ে যাচ্ছে শ্যামবাটি ক্যানাল 
জাম্পকাটেগমগম শনিবারের হাট

শুধু সোনাঝুরি বনের সেলফিরা বিক্রির জন্য টাঙানো রয়েছে কাঁটাতারে

বাংলা দিদিমণির জন্য 

অনন্ত বোতাম খুলে চলেছে ভাষার ব্লাউজ 
চোখ থেকে ছিটকে আসছে পুরোনো খিদেবোধ    
হাওয়ামোরগেরা অপেক্ষা করছে
অপেক্ষা করছে চান্দ্রমাসের স্প্লিনটার       
যে সব মৃত সহবাসদের  
এতদিনে ফিরে যাবার কথা ছিল টাইমলাইনে  
তাদের টানটান ধূর্ত ড্রিবলিং তা দিচ্ছে অক্ষরের বাসায় 
পেট্রোলের জেরিকেন ক্রমাগত এগিয়ে আসছে উজ্জ্বল ক্লিভেজের দিকে  
বাংলা দিদিমণিকে পোহাতে পোহাতে সমস্ত উপনিষদ জুড়ে
এরপর মনখারাপ নামবে    
একবুক বিস্ফোরণ নিয়ে ইউ-টার্নের কথা বলবে    
আয়না এবং ব্ল্যাকবোর্ডের অভিসন্ধি
দিদিমণি, আমরা কি এখনো বুঝিনি
দ্বিধাগ্রস্থ পদাবলীর ভনিতায়     
তুমি আসলে যুদ্ধই শানিয়ে তুলতে রোজ...

বাংলা দিদিমণির জন্য

বাংলা দিদিমনির প্রথম সমুদ্র চুরি বাসে করেদিঘা
বাংলা দিদিমনির প্রথম মেহফিল মানে দুপুরের বিবিধভারতী
আমাদের ঘরে না ফেরা প্রথম রাত স্বরস্বতী পুজোর আগে   
ক্রোমোজোম থেকে এইসব মেটাফরদের
খুলে নিতে নিতে, ক্রমশ খুলে নিচ্ছি
উৎসবের রেসিপি, রূপসী টোটেম     
আত্মাদের খোলামাঠ, ভালোপাহাড়ের সন্ধ্যে      
এভাবেই একটুকরো অমিত থেকে আমি খুলতে খুলতে 
একদিন
শুধু বইয়ের তাক, কূটতর্কের ধুলো, সিগারেটের ঘ্রাণ       
দিদিমনির একমুঠো অনুরোধের আসর 
ফেসবুকে অপ্রকাশিত কুড়িটা কবিতা, না লেখা ছিন্নপত্রাবলি      

দিদিমণি, এভাবেই জুয়ো খেলতে খেলতে
আমাদের ডি-এন-এ-রাকি টিকে থাকতে পারবে
ভুল গ্রহে আরও কয়েকটা বছর...

বাংলা দিদিমণির জন্য

ওঁ ফজরের আজানশব্দ
দিদিমণিরচায়েরকাপভর্তি শব্দহীন ঠোঁট  
ওঁ ফোড়নগন্ধ, প্রণম্য হেঁশেল
দিদিমণিকে নিয়ে কাপুরুষ গল্পেরা ঘাই মারছে হোমটাস্কের খাতায়          
ওঁ কমা, হাইফেন, বেওয়ারিশ আলোর যতিচিহ্ন
বারান্দার তারে শুকোচ্ছে দিদিমনির সাদা সবুজ ডুরে    
ওঁ দুরূহ জ্যামিতিবক্স, নিরাসক্ত জবাকুসুম  
দিদিমণি কেয়ারফ্রির কথা জীবনে শোনেনি   
ওঁ মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ
বাংলা দিদিমণি ছোটো মাছ খুব ভালোবাসে  
ভালোবাসে নবকল্লোল, সুচিত্রা উত্তম, বিনাকা গীতমালা    
ওঁ নীলষষ্টির সন্ধ্যে অবধি উপোষ
দিদিমণি জানলা দিয়ে একা তাকিয়ে আছে অন্ধকারের দিকে 
বাংলা দিদিমণি, মনে পড়ে  
আমি আমার সমস্ত জ্যোৎস্না একদিন বন্ধক রেখেছিলাম   
তোমার মেচেতা পড়া গালে... 

বাংলা দিদিমণির জন্য

তোমাকে লিখি না আর বাংলা দিদিমণি  
আজকাল তোমাকে লেখে পার্লারের লিরিক, মিডিয়ামের লংমার্চ  
ধোঁয়াটে রান্নাঘর, তোলা উনুনের কাঠ আর তোমাকে লেখে না 
তোমার গোপন লেখে শেনওয়াজ, প্যান্টালুনস, মাদারস রেসিপি 
একদিনরিকশায়যেতেযেতেউল্টেদেখতাম
তোমারখসখসেঅফহোয়াইটপাতা
চোরকাঁটায় জ্বলজ্বলকরতো অতিবেগুনি আলো
ইদানীংমরা বই জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে তুমি রাঁধো   
হিংসুটে ভাষাদের নীল মাংস, ঘেন্নার ইউনিকোড         
তবুআজও সমুদ্রকবিতার স্পর্শ ঝরে ঝরে পড়ে
তোমার শায়া থেকে, কোলআঁচল থেকে,বৃষ্টিপাত থেকে
হাঁটু অবধি ডুবে থাকা পাণ্ডুলিপিদের মধ্যে সাঁতরাতে সাঁতরাতে
আমি তোমার ব্রণগুলো লিখি, গালের ব্ল্যাকস্পটদের লিখি
ডগাফাটাখোলাচুলেদের লিখি
বাংলা দিদিমণি
তবু তোমাকে কিছুতেই পুরোপুরি লিখতে পারি না...



মার্চ ২০১৮

1 comment: