তপোভাগ : তৃতীয় পর্ব
(ধরম দ সেরমা রে মেনায়, আদ দ বায় ঞেলঃ, সিঞ, বঙাতেয় আজাঃ পারশাল)
ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে তার। নাক দুইপাশে অল্প বেড়ে গেছে, চক্ষু বিস্ফারিত। শরীর
অল্প অল্প দুলছে। পা
দুটি হাঁটু মুড়ে পেছনে, ডান
পাশের দিকে ছড়ানো। ঋজু
সারজমগাছটির রুক্ষ কাণ্ডটিকে জড়িয়ে আছে তার বাম হাত, মাঝে মাঝেই সেই হাত গাছটিকে
অধিক জোরে জড়িয়ে ধরতে যাচ্ছে, ডানহাত একবার ঘাসগুচ্ছ মুঠো করে ধরছে, যেন উপড়ে আনবে, আবার ছেড়ে দিচ্ছে, মাটিতে ঘসছে, ফের তুলে আনছে নিজের ঊরুতে, খামচে ধরতে যাচ্ছে নিজের ঊরু, ঘসছে, ফের চলে যাচ্ছে হাত ঘাসে। শরীর
দুলছে। ফণীনির
মতো। সগর্জন। নিঃশ্বাসে
হলকা। কিন্তু
বিষ ঢালবার এখন উপায় নেই, শিকার
সে ফেলে এসেছে। সজোরে
সে গাছটিকে জড়িয়ে ধরে। তার কণ্ঠায়, স্তনে তীব্র বেদনা হয় সেই আলিঙ্গনে, তবু ছাড়েনা সে। মাথা
ঠুকতে ইচ্ছে হয় গাছে, নিজের
মাথাকে ফণীনির সক্রোধ দংশনের ন্যায় গাছটিতে বিঁধে ফেলতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে সংযত
হয় সে। চিহ্ন
থেকে যাবে আঘাতের, সে
চিহ্নের সঠিক কারণ দর্শানো যাবে না, বরং লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবার সম্ভাবনা। নাঃ
স্থির হতে হবে, স্থির
হতে হবে...
কেন যে তার লোভ হলো! অমন তাজা সতেজ শরীর, দেখে নিজেকে সামলাতে পারলোনা
সে, অল্প
বিলম্ব হয়ে গেল। মন
বিভল হয়ে গেছিল তার। পরিস্থিতি ছিলো একেবারেই অনূকুল। দ্বিপ্রাহরিক
আলস্যাবকাশ, ব্যস্ত
দৌড়োদৌড়িতে নেই তেমন কেউ, প্রহরা
শিথিল। হাতে
এসে গিয়েছিল সুযোগ, অপ্রত্যাশিত। মুহূর্তের
লোভ, মুহূর্তের
লোভ! কিকরে
এই লোভ হলো অকস্মাৎ, নারীর
শরীরে ইতিপূর্বে কখনোই তার লোভ হয়নি, আর এ তো নারীই নয় এখনও। সুষম আকারের পুষ্টতনু, টানটান চামড়ায় আলো পিছলে যায়
যেন ভাপ বেরোচ্ছে! সৌরভময়ও। স্নানের
আগে, স্নানে
এবং স্নানের পরে নানাবিধ গন্ধদ্রব্যের সমাহার, সুগন্ধী হবে না দেহ? সেই দেহ, ফেলে দিলো মুহূর্তের লোভে। অল্পের
জন্য লক্ষ্য হাতছাড়া হয়ে গেল তার।
উপুড় হয়ে শুয়েছিলো পৃথা। সংবাহন করে দিচ্ছিলো সে। পৃথা
তন্দ্রাচ্ছন্ন হলো। তার
হাত মৃদু আলস্যে উঠে যাচ্ছিলো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। পৃথার অনাবৃত পিঠ, এখনো গড়ে ওঠেনি, এখনো লাগেনি লাবন্যমেদ, এখনো পিঠের দিকে ডানাদুটি
বোঝা যায়। পায়ের
দিকের বস্ত্র সংবাহনের কারণে কোমরের ঊর্ধ্বে উঠে জড়ো হয়েছে। জানু অব্দি হতেই
তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়েছিলো পৃথা, জঙ্ঘা পেরিয়ে নিতম্ব, সাবধানে তা অস্পর্শিত রেখেই
কটিদেশে উঠে গেছিলো সে। এরপর! এরপর পিঠের মাঝখানে জানু দিয়ে চেপে কেশগুচ্ছ
গোড়া থেকে ধরে হ্যাঁচকা টান দিতে হতো, মুহূর্তেকের একটি 'অাঁক' শব্দের সঙ্গে সঙ্গেই ঘাড় ভেঙ্গে প্রাণ বেরিয়ে
যেতো পৃথার, শরীর
অবশ্য আরো খানিকক্ষণ ধড়ফড় করতো! শরীর শান্ত হতে হতে, ঠাণ্ডা হতে হতে, সবাই জানতে জানতে পলা পৌঁছে
যেতো গভীর জঙ্গলে, দ্বিপ্রহরের
এই অর্ধপ্রহরা পেরিয়ে যাওয়া তার কাছে সামান্য আয়াসের খেলামাত্র!
ক্ষণমাত্রের দূর্বলতা, ক্ষণমাত্রের দেরি, কেন যে তার এই বালিকাশরীর
পেষণ করতে ইচ্ছে হলো! নিজের
গালে চপেটাঘাত করতে ইচ্ছে হয় তার!
নিঃশ্বাস কিছুতেই সহজ হচ্ছেনা তার, কর্ণমূল আরক্ত, সারা শরীর অস্থির। নাকের
ওপরের তালু শুকনো, অনেকক্ষণ
জলপান না করলে যেমন খসখস করে, অস্বস্তি হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থান অদ্ভূত
অদ্ভূত আচরণ করছে, এখন
কোন মানুষ সহ্য হবেনা তার, কাছাকাছি
কেউ এলে সে পাথর ছুঁড়েই মেরে ফেলবে! কুঞ্চিত ভ্রু'র নিচে বিশাল দুইখানি চোখ
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সে পাথর খুঁজছে। রন্তাকে বলে এসেছে অল্প দেরি হবে তার, রন্তা মুচকি হেসেছিলো, ভেবেছিলো সে বুঝি শামপোকের
কাছে চলেছে, অভিসারে। যা
খুসি ভাবুক, এখন
সেসব ভাববার সময় নেই। এখন তাকে স্নান করতে হবে। সর্বাঙ্গে উত্তাপ এবং কম্পন, প্রবল এক স্নান তাকে শান্ত
করতে পারে, স্থিত
করতে পারে এখন।
কারণ, শামপোক এখন রাজ্যে নেই। সে থাকলে তার দায়ীত্ব থাকে
রাজসন্নিধানেই, এখানের
অনেকেই পলার পরিচিত, তাদের
কারো মাধ্যমে পলা শামপোককে ডেকে নিতে পারতো। শুধু অশান্ত এক সঙ্গম পলাকে
এখন শান্ত করতে পারতো। শামপোক নেই, তাই জল, আসেয়া নদী। এই নদী তার সব জানে। তার
শরীরের সর্বত্র ছুঁয়েছে শুধু এই নদীই। কতো রক্ত, কতো ঘাম, কতো ঋতু, কতো কান্না তার, সে রেখেছে এই আসেয়া নদীর
কাছে।
আসেয়া নদীর পাড় বেয়ে বেয়ে সে নৃপতির গৃহ থেকে দূরে চলে যেতে চায়, যথাসাধ্য দূরে, বাঁক ফিরবার আগে, যেখানে স্নান করতে নেমেও যেন
চক্ষুসীমায় এই নৃপতির ভবনটি দেখা না যায়। সেই ভবন, যেখানে নৃপতি কুন্তীভোজ আছে। যেখানে
পৃথা আছে। এখনো। জীবিত।
* * * * * * * * * * * * *
অসীম আকাশে জলমগ্ন পৃথিবী। পিতা ঈশ্বর শাস্তি দিয়েছেন। তারপর
বিচার করেছেন। তারপর
জলমধ্যস্থিত সিরম গাছের পাতায় বসে সিরম গাছের শিকড় দিয়ে হাঁস এবং হাঁসলির জন্ম
দিলেন। ওই
সিরম গাছের উপরেই কারাম গাছ। তার ডালে পাখি দুটি বাসা বাঁধলো। ডিম
পাড়লো। এরপর? সর্বত্র তো জলে জল।
তারা কাঁদলো। মারাংবুরু
জানালেন পিতা ঈশ্বরকে। কচ্ছপরাজ পারলো না, সর্পরাজ পারলো না, ইচারাজও পারলো না স্থল তৈরি
করতে, জলে
মাটি গলে গলে যায়। কচ্ছপের
ওপর চক্রাকার সর্পরাজ, তার
ওপর সোনার থালা উপুড় করে রাখা হলো। মারাংবুরু এবার কেঁচোরাজকে ডাকলেন। সে
পাতালের মাটি খায় আর সোনার থালায় মলত্যাগ করে। করে করে মঞ্চপুরী হলো, পৃথিবী। মারাংবুরু তাতে দুবুলা ঘাস, সাগা ঘাস, শাউড়ি শাক, সারি সারজম, পেটের বাড়ে, এরে আতানা, বান্দলতা, কাশির বীজ বুনে দিলেন। তারপর
সেই হাঁসহাঁসালির ডিম থেকে জন্ম নেওয়া দুটি মানুষকে সাগাঃ গাছের তলায় নিয়ে এলেন। জায়গাটির
নাম হিহিড়ি। সেখানে বিধাতা
তাদের দেখতে পেলে তারপর তাদের জানুমধুনে নিয়ে গেলেন। সে জায়গার নাম পিপিড়ি। সাগাঃক
গাছের চালের জল খেয়ে তারা বড়ো হল, সেই চালের ভাতও খেল। আট দিনের দিন, আতানা গাছের পাতায় তাদের
তুলে ধরলেন মারাংবুরু, ছেলেটির
নাম দিলেন পিলচু হাড়াম, মেয়েটির
পিলচু বুড়হি।
হায়, তাঁরা কোথায়? তাদের সন্তানদের অবস্থা দেখে
তারা কি ব্যথিত হন আজ?
সব কেড়ে নিয়েছে ওরা, সব। বর্বর
জাত এই শ্বেতকায়রা। হিংস্র। নষ্ট
করা, ধ্বংস
করা ওদের স্বভাব। ঘরদোর
বানাতে জানে না, চাষ
করতে জানেনা, শুধু
জানে রক্তারক্তি, জানে
পরশু গদা শূল, জানে
হত্যা, ধ্বংস। এই
যে অরণ্য, এত
সুন্দর অথচ এত বিচিত্র, এত
সুখকর অথচ এত বিপজ্জনক, তাকে
ওরা চেনেনা। বৃক্ষকে
অনায়াসে কেটে ফেলে, মহা
মহা বৃক্ষদের, প্রাণীদের
হত্যা করে। যে
প্রাণীগুলি কম বিপজ্জনক তাদের বন্দী করে। সবই ওদের ব্যবহারের জিনিস। বৃক্ষগুলি
রথ তৈরিতে কাজে লাগে, গৃহদ্বারের
চতুঃকাষ্ঠ গবাক্ষ আরো অন্যবিধ, যদিও হড়দের সহায়তা ব্যতীত গৃহনির্মাণ ওদের
সাধ্য নয়। আরণ্য
প্রানীদের হত্যা করা ওদের খেলা, মৃগ শশক ময়ূর বরাহ শল্লকীর মাংস খাওয়া যায়, সিংহ ব্যাঘ্রের তো মাংস
খাওয়া যায় না, তবু
হত্যা করে ওরা, হত্যাখেলা, তার নাম মৃগয়া। এত
মাংস খাবার কি প্রয়োজন হয় ওদের, কে জানে! ধারতি মাতা যে কতো খাদ্যসম্ভার ছড়িয়ে রেখেছেন
তা আবিষ্কার করার ওদের আগ্রহ নেই। কতো প্রকারের শষ্প চারদিকে, সুস্বাদু, ভোজনযোগ্য, উপাদেয়ও, খেতে শেখেনি এই শ্বাপদতুল্য
শ্বেতজাতি। যদি
মাংস খেতে হয়, তো
অপেক্ষা করলেই হয়। ব্যাঘ্র, চিৎরাং, বন্য বৃক বা তরক্ষুদল যেসব
মৃগাদি পশু খাদ্যার্থে হত্যা করেছে তাদের ভুক্তাবশেষ প্রায়ই পাওয়া যায় অরণ্যে। তার
জন্য মাংসভূক পাখিদের গতিবিধি অনুধাবন করতে হয়, বনগন্ধ চিনতে হয়, বনকে চিনতে হয়, এই মাতা ধারতিকে চিনতে হয়। কিছু
চেনেনা, কিছু
জানেনা এরা, বলপ্রয়োগ
জানে, বলপ্রয়োগে
করায়ত্ত করা জানে। কৃষিও
জানেনা। এদের
ওপর যদি কৃষির ভার সম্পূর্ণ ছেড়ে রাখা হয়, একটি ঋতুতেই এরা না খেতে পেয়েই মরে যাবে। কিন্তু
ওই যে, বলপ্রয়োগ। অসি
ঘুরিয়ে, গদা
দেখিয়ে, এরা
নিয়ে যাবে চাষে, তাদের। তাইই
হয়। তাইই
হয়ে আসছে।
পরপর পূর্ণ আকারের বৃক্ষদের সারি এই আসেয়ানদীর পাড়ে, এই বৃক্ষগুলিকে না কাটলে এই
শ্বেতজাতির নগরপ্রতিষ্ঠা হয় না? বৃক্ষগুলিকে স্থান ছেড়ে দেওয়া যেতো না? রাজআবাস নির্মিত হবার আর কোন
স্থান নেই? আহ
পিম্পক আর মঞ্জী! পলা
তাদের জন্ম থেকে দেখেছে, তাদের
বেড়ে ওঠা ত্বকের প্রতিটি অংশে পলার হাতের স্পর্শ আছে। কখনো কখনো বিশেষ ক্ষণে যখন
পলার একা থাকতে ইচ্ছে হতো ওদের দুজনের মাঝখানে এসে সে বসতো, ওদের সাথে কথা বলতো, এমনই এক একান্ত ক্ষণে তাকে
এখানে শামপোক আবিষ্কার করেছিলো। সে খুবই এককমনা ছিলো সেই অপরাহ্নে, দূর থেকে পাতার শব্দ শুনে
বুঝেছিল ডোলের পাশের উঁচু পাড় দিয়ে কেউ আসছে, তবু তার সরে যেতে বা লুকিয়ে পড়তে ইচ্ছে হয়নি। তারপর
শামপোক এলো, কথা
হলো, তাকে
সঙ্গে নিয়ে ফিরতে চাইলো, সে
যায়নি, আরো
কিছুক্ষণ রয়ে গিয়েছিল মঞ্জী আর পিম্পকের মাঝখানে।
সেই স্থানেই, পরে একদিন। ওরা
পাঁচজন। পলা
একা। ওরা
মৃগয়াবিলাসী, পলা
মাংস।
দূর থেকে রথশব্দ শোনা গেছিলো। অরণ্যমধ্যস্থ
ভূভাগে তাদের বসতিতে তখন প্রখর বেলা, কৃষ্ণকায় হৃষ্ট শিশুরা ধুলোয় খেলছে, একটি কালো রঙের এবং দুইটি
পিঙ্গলবর্ণের কুকুর তাদের বসতিতে রয়ে গেছে, বাকি চারটি গভীর অরণ্যে গেছে পুরুষদের সাথে। কুকুর
তিনটি ডেকে উঠলো, ডাকতেই
থাকলো। রথশব্দ
নিকটতর হতে হতে তারা সবাই কুলকুলি দিয়ে উঠলো, গভীর অরণ্যে থাকা তাদের জনদের কাছে বার্তা
পাঠাতে কুলকুলি দিতেই থাকলো, কুকুরগুলি একদিকে মুখ করে ডেকেই চলেছে, পিঙ্গলবর্ণের সারমেয়ীটি
প্রথম, আর্তনাদ
করে উঠলো, পেছনদিকে
ছুটে পালাতে গ্যালো পলার পাশ দিয়েই, মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে, পলার একটু পেছনেই সে ঘাড়
গুঁজড়ে পড়ে গ্যালো। বাম
চোয়ালের পর যেখানে গলা শুরু হচ্ছে, সেখান দিয়ে ঢুকেছে তীর, ডানদিকের সামনের পায়ের পাশ
দিয়ে, কাঁধে, কোনাকুনি বেরিয়েছে। গলগল
করে রক্ত বেরোচ্ছে, কুকুরটি
হাঁপাচ্ছে, জিভ
বেয়ে মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, তীরটিকে ঝেড়ে ফেলার জন্য আর সে ঘাড় ঝাঁকাতে
পারছেনা, তার
দৌড়ে আসবার পথে ধুলোয় রক্ত ছড়িয়ে রয়েছে। অন্যদুটি কুকুর কুটিরের পাশ
থেকে উঁকি দিচ্ছে, ডেকেই
চলেছে ক্রমাগত। পলারা
সকলে কুলকুলি দিয়েই চলেছে, শিশুগুলি
চিৎকার করছে, কাঁদছে, একটি রথ এসে দাঁড়ালো তাদের
আঙ্গিনায়।
একজন সারথি, নিরস্ত্র। আরেকজনও নিরস্ত্র, সে মধ্যে দণ্ডায়মান, তার দুইপাশে দু'জন সশস্ত্র। মাঝের
জনই দলপতি। সে
তার দুটি নিরস্ত্র হাত তুলে অভয়ের ভঙ্গি করলো। পলারা থেমে গেল।
এরপর সেই বার্তা। সাতদিনের মধ্যে অশ্বনদীর পশ্চিমপাড়ের সমতল
অঞ্চলটি তাদের তৈরি করে দিতে হবে। সেই অঞ্চল, যার পশ্চাতে সেই এক মহিষ উঁচু দুটি প্রস্তরখণ্ড
আছে, সমতল
সেখানে ভূমি, গাছগুলি
কেটে ফেলতে হবে, রাজআবাস নির্মিত হবে তথায়। রাজআবাসের এত কাছে তাদের এই পল্লী যেন তারপর না
থাকে আর। তারা চাইলে নগরীর অন্যপ্রান্তে তাদের স্থান
দেওয়া হবে, তারা সেখানে যেতে পারে, অন্যথায় তারা যেন গভীর অরণ্যে চলে যায়।
এটুকু বার্তাই যদি দেবার তো, সুকিকে হত্যা করতে হলো কেন? পলা দ্রুত গিয়ে বাকি দুইটি কুকুরকে আড়াল করে
দাঁড়ায়। রথ ঘুরিয়ে নেবার আগে দলপতি, তার বামপার্শ্বের জনকে চক্ষুর ইঙ্গিত করলো, সে আরো দুটি তীর মেরে সুকিকে যন্ত্রণা থেকে
মুক্তি দিলো। ধুলো উড়িয়ে ওরা চলে গ্যালো।
পৃথিবী কার? কার এ ধারতি মাতা? এ ভূমি, এ অরণ্য, এই আসেয়া নদী, যাকে ওরা অশ্বনদী বলে, এর কোথায় কয়টি গাছ আছে কোথায় ওষধিবৃক্ষ, কোথাকার জল সুপেয়, অরণ্যের কোন কোন ভাগে কেমন কেমন শিকার পাওয়া
যায়, তা সব জানে হড়রা, পলারা জানে। ওরা, ওই সাদারা কিছু জানেনা। ওরা অধিকার করবে। অধিকার করতে গিয়ে ধ্বংস করবে, অধিকার করে ধ্বংস করবে, তারপর এক কৃত্রিম অঞ্চল তৈরি করবে, সেখানে বাস করবে, যা স্থূল, যাতে প্রকৃতি নেই, প্রাণহীন। তাদের জন্য এ অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে হবে?
সন্ধ্যাবেলায় সকলের মিলিত
সিদ্ধান্ত হলো, না, এ অঞ্চল ছেড়ে যাবে না। প্রতিরোধ করবে, গাছও কাটতে দেবে না। ষষ্ঠ দিনের অপরাহ্নে, সেই দলপতির বামপার্শ্বের কপিশচক্ষু দীর্ঘকেশ
ব্যক্তিটি একা এলো তাদের স্মরণ করাতে, তাকে জানিয়ে দেওয়া হলো, তারা তো করবেই না ওই কাজ, অন্যকেও করতে বাধা দেবে। এই বৃক্ষলতাময় জলজ প্রকৃতিকে তারা আহতও করবেনা, ছেড়েও যাবেনা।
পরেরদিন। সিঞবঙা তখনো মুখ দেখাননি, পূবাকাশ রক্তাভ, পাখিরা ডাকাডাকিতে ব্যস্ত, রথধ্বনি শুনেই বোঝা
গেল পরপর অন্ততঃ পাঁচটি রথ। চিৎকারের রোল উঠলো, কুকুুরগুলি ডাকতে শুরু
করেছে, রথের নির্ঘোষ তাদের বসতির মধ্যস্থিত
উঠোনের বাইরে থেমে গেল।
হড়রা তীর চালাতে ভালো জানে। এই শ্বেতদের থেকে অনেক
নিখুঁত তাদের শরসন্ধান, শ্বেতরা তীরধনুর ব্যবহার তাদের কাছ থেকেই শিখেছে। পূর্বে তারা শুধুমাত্র পাথরের ভোঁতা পরশু এবং
কাঠ ও পাথরের লগুড় তথা গদা ছাড়া আর অস্ত্র ব্যবহার করতেই জানতোনা। শরসন্ধানের প্রতিযোগীতায় হড়দের কাছে তারা
বালকমাত্র। কিন্তু এ তো প্রতিযোগীতা নয়, এ তো এমনকি সমরও নয়, এখানে একপক্ষের আক্রমণ, অপরপক্ষের আত্মরক্ষা। এখানে আগ্রাসনের প্রতিরোধ মাত্র। এক হাতে যতগুলি আঙ্গুল, ততোজন নিরস্ত্র পুরুষ
তাদের আঙ্গিনায় এসে দাঁড়ালো, বাইরে রয়ে গেছে তার আরো
অন্ততঃ তিনগুন লোক, সশস্ত্র। পলারা সকলে সমবেত, সেই দলপতিটি তাদের মধ্যে
চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুঁজে নিতে চাইছিলো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে, যার সাথে কথা বলা যায়। খুব সকালে শয্যাত্যাগ করে
তারা প্রত্যেকে সকলেই, তবু অনেকে প্রস্তুত নয়, বিস্রস্ত, কেউ কেউ অবিন্যস্ত, বিস্ময়ের ছাপ প্রত্যেকের
চোখে, নিস্তব্ধতার মাঝে বনবিহঙ্গেরা ডেকে চলেছে এবং
তাদের কুকুরগুলি। পলা দুটি কুকুরকে সামলাচ্ছে, তারা অশান্ত, ঘাড় ছাড়িয়ে নিচ্ছে বারবার, আগের তুলনায় কমে
গেছে তাদের ডাক তবু তাদের মন থেকে সংশয় সম্পূর্ণ নিরসন হয়নি, এক আধবার যেন তারা তাদের অবিশ্বাস প্রকাশ করে ফেলছে।
কোন যুথই পরস্পরের ভাষা ভালো জানেনা। দলপতিটি হড়দের ভাষা সামান্য জানেন। পলার মা মলিকার প্রতি তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো। তাকে সম্বোধন করে তিনি আদেশ দিলেন, রাজ-আবাস তৈরির কাজে তারা যেন এক্ষুণি প্রস্তুত হয়। হড়দের শারীরি ভাষায় বিদ্রোহ, এতগুলি উদ্যত পুরুষের
সামনে উষ্মা প্রকাশ করতেও পারছেনা, সরব হলো মলিকা। সে জানালো, আসেয়া নদীর পশ্চিমপাড় ধরে আরো
অর্ধদণ্ড গেলেই মুক্ত প্রান্তর, ঊষর, সেখানে বৃক্ষাদি নেই, সেখানেই রাজ আবাস স্থাপন
করা হোক। মহিষপ্রমাণ প্রস্তরদুটিকে তারা দেবতা মানে, তাদের সরানোর জন্য স্পর্শ
করবে না তারা, গাছও কাটবেনা, গাছও তাদের দেবতা।
পাঁচজনই নিরস্ত্র ছিলো। দলপতিটি উচ্চস্বরে কিছু
বললেন, আদেশ
দিলেন সম্ভবতঃ, দ্রুতবেগে বাইরে থেকে পাঁচজন সশস্ত্র
যোদ্ধা এসে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিলো, তারা নিজেরাও
সশস্ত্র। বসতির বাইরে, রথগুলির কাছে আরো
কয়েকজনের সশস্ত্র প্রহরা। দলপতি আরো একবার মলিকার দিকে
চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তারা যাবেনা? অধিকার ছাড়বেনা? অপলক চোখে তাকিয়ে মলিকা উত্তর দিলো, না।
শুরু হয়ে গেল। প্রথমে তাদের কুটিরগুলিতে
অগ্নিসংযোগ। হড় পুরুষরা বাধা দিতে এল, তাদের গদা ও পরশুর দ্বারা
ছিন্নভিন্ন করা হলো, নারীরাও বাদ পড়লো না, চিৎকার, কুকুরগুলির ডাক, বালকবালিদের কান্না, পুরুষ ও নারীকণ্ঠের
আর্তনাদ ও প্রতিরোধের ভাষা... কয়েকজন ছুটে পালাতে গেল, তীরবিদ্ধ হলো তাদের মধ্যে কেউ কেউ, কেউ কেউ
পালাতে পারলো তীর থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে, কেউ তীরে আহত
হয়েও। পলা শিশুগুলিকে আর কুকুরগুলিকে রক্ষা করার
চেষ্টা করে চলেছিলো কিন্তু বিশৃঙ্খলার সময় কোন ঠিক থাকে না। দলপতিটি স্বয়ং সুকনার চার বছর বয়সী শিশুটিকে আছড়ে মেরে
ফেললেন, কালুয়া
নামে কুকুরটি মাথায় গদার আঘাত খেয়ে ওপাশে পড়ে রক্তবমি করছে। মলিকা কোথায়? কোথায় শামপোক? সুকনা, বিনতা, টঙা, মাতুন, সিমপি, তারো, পাতুই? কে কোথায়? দাউদাউ
করে জ্বলছে প্রতিটি ঘর, কোন কোন শিশুকে ধরে সেখানে
ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে, হড় পুরুষরা প্রস্তূতই ছিলো না নইলে
তীরধনুকের যুদ্ধ তারা করতেই পারতো। এখন শিকারের জন্য অস্ত্রাদি নিয়ে যে প্রতিরোধ করবে তার উপায়
নেই, অস্ত্রসকল
যে ঘরে থাকে, তার দরজায় পাহারা দিচ্ছে দুজন গদাপরশুধারী
পুরুষ এবং শামপোক। শামপোক?
এ অবস্থায়ও বিস্ময়ে হতবাক হয় পলা। শামপোক? বিশ্বাসঘাতক!!
অস্ত্রের ঘর শামপোক পাহারা দিচ্ছে শ্বেতদের হয়ে, সঙ্গে দু'জন শ্বেত। মাতুন, তারো আর টঙা তবুও ঢুকতে গেল সেখানে, রন্ধনের জন্য রাখা বড়ো আকারের চ্যালাকাঠ নিয়ে। ওদের একজনের গদাঘাতে মাতুনের সেই চ্যালাকাঠ ভেঙে গেল, মাতুনের কাঁধের পাশে এবং
চোয়ালের নিচে আঘাত, টঙা শামপোকের বুকে ধাক্কা দিতে
পেরেছে, তার চ্যালাকাঠটি দীর্ঘাকার, তারো সেই অবসরে ঢুকে পড়েছে অস্ত্রগৃহে, সেই
গৃহের একদিকের কড়িকাঠ ভেঙে ঘরের ভিতর পড়লো, তারো সেই
জ্বলন্ত কাঠের তলায় পড়ে চিৎকার করছে, এই গৃহেই প্রথম
আগুন দিয়েছিলো ওরা। দ্বারের বাইরে মাতুন পড়ে
গেছে, তার
মস্তক লক্ষ্য করে একজন শ্বেত পরশু তুলেছে, টঙা পালালো। চ্যালাকাঠ হাতে নিয়েই সে দৌড় দিলো...
যেদিকে রথগুলি, তার বিপরীত দিকে দুটি কুটিরের
মাঝখানের সরু ফালি দিয়ে উঁকি দিলো পলা, মুঠো দুটো ভর্তি, হাত পিছনে, দুজন ধনুর্ধর প্রহরায় আছে, মলিকা তাদের পাশ দিয়েই
বনের দিকে দৌড়োলো, ধনুর্ধর দুজন শরসন্ধান না করে তার
পিছু নিল উল্লাস আস্যে। মা, মা... পলা ডানহাতের ধুলো ফেলে বামমুঠোয় ধুলো, ডানহাতে
একটি পাথর নিলো, তার বস্ত্রে বাঁধা আরো তিনটি পাথর, সে কুলকুলি দিয়ে উঠতেই ধনুর্ধর দুটি তার দিকে তাকালো। মলিকাকে ছেড়ে তারা পলার দিকে এগিয়ে আসতে থাকলো
কিন্তু দৌড়ে না, সতর্কে।
এদিকে পলার দেওয়া কুলকুলি ডাক শুনতে পেয়ে ঘুরে তাকিয়েছে মলিকা, সে দেখলো পলাকে ঘিরতে
চলেছে দুইজন পুরুষ। মলিকা নারীইন্দ্রিয় দিয়েই
বোঝে, কি হবে
এবার। আধকুড়ি দুইবছর বয়েসী কন্যাটি তার, এখনো রজস্বলা হয়নি... মলিকাও কুলকুলি দিতে দিতে ফিরে আসতে থাকলো। পুরুষ দুটি একবার মলিকার দিকে দেখলো, তারপর আবার পলার দিকে। মলিকা এগিয়ে আসছে, মাঝে দুপাশে পুরুষ দুটি, এদিকে পলা। পলা, যেন মলিকার দিকে যাচ্ছে
এমন ভাব করে এগোতে এগোতে ডানদিকের পুরুষটির দিকে তার ডানহাতের পাথরটি ছুঁড়ে মারলো, বিকটি চিৎকার করে উঠলো পুরুষটি, বাঁদিকের
পুরুষটি প্রস্তুত হবার আগেই তার চোখে ছুঁড়ে দিলো ধুলো। ডানদিকেরটির চোখে লেগেছে পাথর, রক্ত পড়ছে, বাঁদিকের পুরুষটি বসে পড়েছে, পলা ও মলিকা হাত
ধরাধরি করে দৌড় দিলো সেদিকে, যেদিকে আসেয়া নদী।
খানিক দূর যাবার পর তারা বুঝতে পারে, তাদের
অনুসরণ করা হচ্ছে। পদশব্দেরা এগিয়ে আসছে। পিছু ফিরে একবার দেখে নিয়েই আবার দৌড়, সময় এখন মূল্যবান, প্রতিটি পল খানিকটা করে দূরত্ব এগিয়ে দেয়, দিনের
আলোয় ঝলমল করছে অরণ্য, মা মেয়ে দৌড়ে চলেছে, মলিকা হঠাৎ আছাড় খেয়ে পড়লো।
একটি তীর। তার ডানপায়ের জঙ্ঘায় বিদ্ধ হয়েছে, সামনের দিকে বেরোয়নি। একটি গোড়ার কাছ থেকে ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছের পাশ
দিয়ে পেরোচ্ছিলো মলিকা, তীরটিতে ভারসাম্য হারিয়ে সেই গাছের গোড়ায় হোঁচট খায়, ঘুরে আছড়ে পড়ে, পড়ে থাকা গাছটির কাণ্ডে তার
মাথা ঠুকে যাবার শব্দে পলা চমকে যায়। সে মা'কে ধরে তোলার চেষ্টা করে, সময় নষ্ট
হচ্ছে। মলিকা উঠতে উঠতে কাতরায়, পলাকে চলে যেতে বলে। পদশব্দ এগিয়ে আসছে, এখন দূরে বৃক্ষান্তরালে
তাদের বস্ত্রাদিও দেখা যায়, মলিকা উঠতে পারে না, পলাকে চলে যেতে তাড়া দেয়, এতক্ষণে চোখে জল আসে
পলার। মুহূর্তমাত্র। সিদ্ধান্ত নেবার সময় বেশি নেই। জল ঝরছে কান্নার, শব্দ গিলে নেওয়া, পলা উঠে দাঁড়ায়, থানের পথে যাবার আগে আসেয়া নদী, মা রয়ে গেল, মা'কে কি ওরা
মেরে ফেলবে? মা, মা... চোখ মুছতে মুছতে পলা দৌড়োয়, দৃষ্টি অস্বচ্ছ হলে
চলবেনা এখন, মা... হে
মারাংবুরু, হে পিলচু হাড়াম, পিলচু
বুড়হি...
শব্দ শোনা যাচ্ছে। মলিকার আর্তনাদ, পুরুষকন্ঠের উল্লাস, একটি ঝোপের আড়াল থেকে চোখ সরু করে দেখে পলা, পাঁচজন। মলিকার কাছে। না ওরা অস্ত্র দিয়ে মলিকাকে আঘাত করে মেরে ফেলছে না। ওরা নিজের বস্ত্র খুলছে। ওরা মলিকার বস্ত্র খুলে নিচ্ছে, হিঁচড়ে। টেনে। ওরা মলিকার শায়িত শরীরকে হাত আর পা ধরে ছেঁচড়ে নিয়ে আসে
একটু পাশে। তারপর প্রত্যেকে নগ্ন হয়।
এই সেই আসেয়া নদী। গলা অব্দি ডুবিয়ে রয়েছে পলা। তারপর কতো চাঁদ পেরিয়েছে? দুই কুড়ি সাত। আঁজলায় জল তুলে মাথায় ঢালে পলা, মাথায় জল চাপড়ায় বারবার। পাড়ে খুলে রাখা আছে বসন, সিক্ত বস্ত্রে
সন্ধ্যাবেলায় ফিরতে অসুবিধে হবে তার, জনবিরল এ আসেয়ানদীর
জলে সে নগ্নাবস্থায় নিজেকে ডোবাচ্ছে। পা গেঁথে আছে জলতলের কাদায়, বুকভর্তি দম নিয়ে সে ডুব
দেয়, চিৎকার করে ওঠে সে, জলের
উপরিতলে কয়েকটি বুদবুদ উঠে আসে মাত্র। খামচা মেরে তুলে আনে নিচের কাদা। আছড়ে ফেলে আবার তা, জলে। জলে আঘাত করে সে। হাত দিয়ে, একে একে, হাত দুটি জড়ো করে, মাথা ঠোকে জলে। দু'মানুষ গভীর জলে চলে যায়, উপায় নেই, হাত পা সহজেই সাঁতার দেয়, প্রচণ্ড আক্রোশে পলা জল তোলপাড় করতে থাকে, করতেই
থাকে, মুখমণ্ডলে লিপ্ত কেশ থেকে জল, কপোল থেকে জল, তার মধ্যে কোন কোন বিন্দু
লবণাক্ত, পলা তা নিজেও জানে না। জানু অব্দি জলে উঠে এসে আবার সে নিজের দেহ ছেড়ে
দেয়, কর্তিত
কদলীকাণ্ডের মতো তার দেহ সটান আছড়ে পড়ে ফের, জলে। গলাজলে গিয়ে দাঁড়ায়, আবার। মার্জনা করে সর্বাঙ্গ, প্রত্যেকটি রোমকূপের
মধ্যে স্ফূলিঙ্গ, জল ঘষে ঘষে তা নেবায়। বাম স্তনে হাত রাখলো সে। নেই। বৃন্তটি দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে নিয়েছিলো
পশুরা, শরীরের
অসংখ্যস্থানে তাদের আঁচড় কামড়ের ক্ষত, দাগ রয়ে শুকিয়ে
গেছে, বাম স্তনবৃন্তটি তার, ফিরে
আসবেনা কোনদিন। শামপোকের সঙ্গে প্রতিবার মিলনের সময় কটির
পশ্চাতের সেই স্থানে ব্যথা হয়, মনে পড়ে যায়... শামপোক, শামপোক, একদিন তাকে প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হবে। কানে মাথায় ঘাড়ে ঘনঘন জল থাবড়ায় পলা।
সারজম গাছের ফুলগুলি কেমন ঘুরতে ঘুরতে নেমে আসে। গাছের তলায় অজস্র রয়েছে পড়ে, যেন বিছিয়ে রাখা। তিনটি ফুল তুলে নিয়ে জলে ধুয়ে নিলো পলা। অঞ্জলিতে সেগুলি ধরে উল্টোপাড় ধরে সে ফিরছে সেই
ভবনে, যেখানে
রয়েছে পৃথা, এখনো, জীবিত।
থানের কাছে এসে নতজানু হয়ে বসলো পলা। দেবতার উদ্দেশ্যে শালফুল তিনটি রেখে গড় হয়ে প্রণাম করলো। তারপর চলতে থাকলো রাজভবনের দিকে। তার ভেজা কপালে থানের মাটি লেগে রয়েছে।
(চলবে...)
No comments:
Post a Comment